প্রকাশিত: ১১/১১/২০১৬ ৮:৪৫ পিএম

দীপক শর্মা দীপু:: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কক্সবাজার জেলা শাখার (বিএনপি) সম্মেলন নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। সভাপতি বলছেন, সম্মেলন সহসা সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে। ওদিকে সাধারণ সম্পাদক বলছেন  সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা নেই।

মেয়াদোত্তীর্ণ  কক্সবাজার জেলা বিএনপির   সম্মেলন হয়নি গত চার বছরেও। চার বছরের মেয়াদ উর্ত্তীণ এই কমিটির কারনে দলীয় কার্যক্রম যেমন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, তেমনি  ভেঙ্গে পড়েছে দলের চেইন অব কমান্ড । দলে অনেকটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বে আসতে পারছেনা অসংখ্য ত্যাগী নেতা-কর্মী।

কক্সবাজার শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে ২০০৯ সালে জেলা বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এতে দু’গ্রুপের মারামারিতে সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়। পরে  কেন্দ্র থেকে শাহজাহান চৌধুরীকে সভাপতি ও এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষনা করা হয়। এর পর থেকে জেলা বিএনপিতে দু’টি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। যার কারণে সরকার বিরোধী আন্দোলন জমেনি কক্সবাজারে। তবে আশার কথা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের দৃষ্টি মতে কক্সবাজারের বিএনপি’র গর্ব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের মুক্তি আন্দোলনে  দুই গ্রুপ ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো ভূমিকা রাখে।

২০০৯ থেকে আজ অব্দি কোন সম্মেলন হয়নি।  কিন্তু বার বার উদ্যোগ নিয়েও সম্মেলন করা যাচ্ছে না কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক হুইপ জানান-‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল নয়। কোন কর্মসূচির অনুমতি দেয়না প্রশাসন। যেখানে সভা -সমাবেশ করা যাচ্ছেনা এমন কি ১০জন নিয়ে কোন ঘরোয়া বৈঠকও করা সম্ভব হচ্ছেনা। এই সরকারের আমলে, সেখানে সম্মেলন করা দু:স্বপ্ন।’  তবে তিনি বলেন-‘ কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেয়েছি সহসা সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য। দলের ৪টি ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করে দ্রুত জেলা বিএনপির সম্মেলন করা হবে।’

অন্যদিকে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না বলেন-‘কেন্দ্র থেকে সম্মেলন করার কোন নির্দেশনা নেই। এমন কি কক্সবাজারে সাংগঠনিক সফরে আসা কেন্দ্রিয় নেতারা সম্মেলন করার বিষয়ে কোন আলোচনা করেননি। তাই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।’

এদিকে দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীরা একদিকে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। অন্যদিকে হতাশ হয়ে দলীয় কর্মকান্ডের বাইরে থাকছেন। আবার অনেকেই ছাত্রদল ও যুবদল থেকে বিএনপিতে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

বিএনপি’র কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ  বলেছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে দলে শক্তিশালী কমিটি না আসায় কক্সবাজারে বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। দলে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃংখলা। নেই কোন চেইন অব কমান্ড। চলছে গ্রুপিং। দলীয় কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। অনেকে চরম হতাশায় নিস্ক্রিয়। কেউ জড়িয়ে পড়েছেন ব্যবসায়। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগের সাথে সর্ম্পক রেখে চলেছেন। আবার অনেকে দল থেকেই পদত্যাগ করে যোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগে। তিনি আরো বলেন, এটি হচ্ছে বিতর্কিত কমিটি।  বিতর্কিত কমিটিকে এতদিন দায়িত্ব রাখা উচিত নয়। এতে গ্রুপিং চরম আকার ধারণ করেছে। গ্রুপিং এর কারনে সৃষ্টি হয়েছে দলে বিশৃংখলা।’

সম্প্রতি রামুতে বিএনপি’র ৪ নেতা পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ওই ৪ নেতা হলেন যথাক্রমে রামু উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ভূট্রো, সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. আবদুশ শুক্কুর, উপদেষ্টা নুরুল হক ও এমএম নুরুচ্ছাফা। আর যারা দলে আছেন তাদের মধ্যে চলছে তীব্র গ্রুপিং। আর এর ঢেউ গিয়ে লেগেছে যুবদল-ছাত্রদলেও। গত এক মাসে যুবদল-ছাত্রদলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিশৃংখল ঘটনা ঘটেছে। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র জিসান উদ্দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে মারধরের শিকার হন।

এর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটি থেকে দফায় দফায় পদত্যাগ করেন অর্ধশত ছাত্রদল নেতা। এর মধ্যে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও মারধরের শিকার হন। বিএনপি’র গ্রুপিংয়ের কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ নেতা-কর্মীদের। এ অবস্থায় ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপিতে তীব্র বিশৃংখলা চলছে। দলটিতে এসবের লাগাম টানারও যেন কেউ নেই।

সম্মেলন চেয়ে রাজপথের ত্যাগী ও তুখোড় নেতা এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন-  ‘ জেলায় বর্তমানে বিএনপি’র অবস্থা নাজুক, এতে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। সম্মেলন হলে দলে গতি আসবে। ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত হবেন। এতে দল সুসংগঠিত হবে।  তিনি আরও বলেন- ‘আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলাম। এখন কোথাও নেই। বিএনপি’র সম্মেলন না হওয়ায় আমার মতো শহীদ জিয়ার আদর্শের শত শত ত্যাগী অনুসারী রাজনৈতিক ময়দান থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’

বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ধর-পাকড়ের  রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্মেলন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিবেশে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে সহসা সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে।’

দলে বিশৃংখলা এবং উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দল ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি ও হুইপ শাহজাহান চেীধুরী  বলেন- ‘সুবিধাভোগীরা এক সময় হালুয়া-রুটির জন্য বিএনপিতে ছিলেন। ১০ বছর পর্যন্ত তারা দল থেকে হালুয়া রুটি পাচ্ছেননা। তারাই হালুয়া-রুটির জন্য অন্য দলে গিয়েছেন। কিছু লোক এমনই থাকে এবং এ ধরণের লোক সব দলেই রয়েছে। এছাড়া এতো বড় দল থেকে ৪ জনের  চলে যাওয়া তেমন কিছুই নয়।’ দিসিএম

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়াসহ ৫ দেশ

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...